রাজু টু নীলক্ষেত, পিষ্ট শরীরের আহাজারি আর মনোসামাজিক/শিক্ষিত/লিঙ্গীয় ব্যখ্যার খামচিঃ এবার না হয় মূল প্রসঙ্গে আসি

মঈন জালাল চৌধুরী

ঢাকার রাস্তায় জাপান সরকারের উপহার দেয়া সিটি কর্পোরেশনের গোলাপী ময়লার গাড়ীগুলোকে চলাচল করতে দেখি। জাপানের আন্তরিকতা, পি.আর. এবং সমাধান প্রচেষ্টা দেখে হাসি পায়। কষ্টের হাসি। বর্জ্য আর ময়লার ভারে শক্তিশালী হাইড্রোলিক দুর্বল হয়ে ফাঁক হয়ে আছে আর চুইয়ে চুইয়ে বাংলাদেশের অর্ন্তনিহিত সত্য গড়িয়ে গড়িয়ে পড়ছে। জাপানের এই স্থানিক “সত্য”-কে বুঝতে আরো বহুবছর লাগবে বলেই অনুমান। ছয় বছর পর নিজের শহরে এসেও বাইক চালাতে গা ছম ছম করেছে ছ-মাস। যা আমি শিখেছি জাপানী ট্রাফিক সিস্টেমে তা আন-লার্ণ করতে হয়েছে। আমার চোখের ভেতরে গেঁথে রয়েছে দুই বাসের চাপে ছিন্ন হাতটা। মনে পড়ে আপনাদের?

আমি খুবই দুঃখিত, একজন নবিস হিসেবেও আপনাদের সকল নগর পরিকল্পনাবিদ্যা আর ট্রাফিক  ম্যানেজমেন্টের সাথে আমি একমত নই। আপনাদের, মনোগ্রাহী ব্যখ্যার কোনটার সাথেই আমি যে পুরোপুরি মিশে যেতে পারবো তাও আমি মনে করছি না। ফলে এই লেখা আমাকে লিখতে হচ্ছে নিজেকেই বোঝানোর জন্য।

কোন দেশের বর্জ্য, ট্র্যাফিক আর টয়লেট ব্যবস্থাপনাকে আপনারা কীভাবে দেখেন আমি জানি না। আমি মনে করি এই তিনটিতে সফল হবার মধ্য দিয়েই সেই রাষ্ট্রের অর্ন্তগত রূপটিকে আপনি দেখতে পারবেন। “ডিপ স্টেট” ধারণাটাকে খুব ভিন্নভাবে এখানে ব্যবহার করতে চাই আমি। রাষ্ট্র আর নাগরিক নামক আদৌ কোনকিছুর অস্তিত্ব আছে কিনা থাকলে উনাদের মধ্যকার সম্পর্ক কেমন, তাদের নিজেদের মধ্যে সম্পর্ক কেমন সেটা বোঝার জন্য এই তিনটি নোডাল পয়েন্ট বা বিশ্লেষণ সূত্রের কোন বিকল্প নেই।

ঢাকার রাস্তা@মঈন জালাল চৌধুরী

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে হওয়া সড়ক-হত্যাটি সম্পর্কে আমরা যেসব দৃষ্টিভঙ্গিগুলো দেখতে পাই, ফেইসবুক বিষয়ক সেগুলো এরকমঃ

১. “অশিক্ষিত” ড্রাইভার হলেও নাহলে মানতাম একজন “শিক্ষিত” মানুষ কেমনে এই আচরণ করলেন?

২. জেন্ডারের তরফ থেকে ভিক্টিম নারীর নাম শুধু আসছে আক্রমণকারী পুরুষটির নাম নিতে এত সমস্যা হচ্ছে কেন?

৩. ব্যক্তির মনোস্তাত্বিক অবস্থা যেটা Shubhajit Bhowmik এর লেখায় চমৎকার করে উঠে এসেছে,

৪. গণপিটুনির ভয়ে পলায়ন Rezaur Rahman Lenin

৫. ব্যক্তি হিসেবে চালকের অহম, নিষ্ঠুরতার ইতিহাস; ফাহমিদুল হক

৬. মানবিকতা ডিসকোর্স ও নিজে হলে কি করতেন বয়ান ও ব্যাখ্যা। Rushad Faridi

 ৭. মিতা মেহেদীর ইলাস্ট্রেশন “নিড়াপদ সড়ক চাই”, “নিরাপদ ক্যাম্পাস চাই”

অথবা এই ইলাস্ট্রেশনটি

৮. মানবিক ড্রাইভার চাই:  কাজল আবদুল্লাহ

৯. আরেকটি খুব গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট, জেন্ডারের ক্ষেত্রে যখন শর্মী বলেন, : “বাংলাদেশে মেয়েরা যে মোটরসাইকেলের একদিকে দুই পা ঝুলিয়ে দিয়ে বসেন, তাতে পদার্থবিজ্ঞানের বেসিক সূত্র অনুযায়ীই যে কোন ছোট দূর্ঘটনাও মর্মান্তিক হয়ে ওঠার সম্ভাবনা ৫০% বেড়ে যায়৷ হালকা ধাক্কায় পড়ে যাবার সম্ভাবনা বাড়ে। মাথায় আঘাতে মৃত্যুর সম্ভাবনা বাড়ে।“

আমি এনাদের কারো সাথেই পুরোপুরি একমত নই। দারুণ চিন্তা জাগানীয়া বিশ্লেষণ এবং প্রতিক্রিয়া। আমি অনুরোধ করবো এঁদের লেখা/ইলাস্ট্রেশন দেখে আসতে। আমি কৃতজ্ঞ উনাদের চিন্তার বিষয়ে এবং আমি এনাদের কারো সাথেই পুরোপুরি একমত নই।

বিশ্লেষণের পয়েন্ট অফ এন্ট্রিতে আমার দেখার জায়গা হল, ট্রাফিক একটি পূর্ণাঙ্গ নাগরিক জীবন ব্যবস্থার গল্প, বিছিন্ন ঘটনা নয় অথবা খন্ড খন্ড বিচ্ছিন্ন ঘটনা সমূহের মিশ্রণও নয়।

১. জাপান থেকে  ঢাকায় ফিরে পরিষ্কার দৃশ্যমান যে ঢাকা বদলে গেছে। নগরে যেমন উন্নয়নের জোয়ার তেমনি ইনল্যান্ড মাইগ্রেশনে এই নগরীর জনসংখ্যা ক্রমাগতভাবে বেড়েই চলেছে। এই শহরে বহু ফ্লাইওভার ও মেট্রোরেল তৈরি হচ্ছে এবং ঢাকা ক্রমাগতভাবে বিশ্বের সবচেয়ে বসবাস অযোগ্য শহরে পরিণত হবার “গৌরব” অর্জন করছে। ঢাকার বিকেন্দ্রীকরণ নিয়ে দুই দশকের কথাবার্তাও তেমন আর শুনছি না। কি অবস্থা বি-কেন্দ্রীকরণের?

২. ঢাকায় প্রাইভেট গাড়ীর সংখ্যা অকল্পনীয়ভাবে বেড়েছে, বিগত বছরগুলোর তুলনায় যাণবাহনের গতি শ্লথ থেকে শ্লথতর হয়েছে। ছোট একটা অংক করে দেখলাম যে ঢাকা’র ৩ ঘন্টার জ্যামের খরচ, ৬.২৫ কর্মঘন্টা এবং ১২.৬৭১২৩ কোটি টাকা।

৩. তাহলে প্রশ্ন আসে না এই যে ভীষণ স্লো একটা শহরে কেন একজন মানুষ গাড়ী চাপা দিয়ে পালিয়ে যাবার আপ্রাণ চেষ্টা করে? আপনারা বলবেন “গণপিটুনি”। ঠিকাছে।

৪. সম্পূরক প্রশ্ন তাহলে গণপিটুনি কেন দেয়? কি লাভ হয় তাতে? উত্তর মুহুর্তের ক্রোধ আর জাস্টিস নিশ্চিত করার জন্য। এই পিটুনি না দিলে পরবর্তী আক্রমণের সাহস বেড়ে যায়। তাহলে জাস্টিস সিস্টেম অফ ট্রাফিক কোথায়?

৫. আসিউর রহমান কমেন্ট করেছেন, “গাড়ী মালিকেরা নিজ নিজ গাড়ী চালালে নিশ্চিতভাবেই সড়কে গুড এক্সাম্পল তৈরীর মাধ্যমে ট্রাফিক কন্ডিশন অবশ্যই বেটার হতো।“ আমি মনে করি তা হোত না। কারণ ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা একটি সামগ্রিক ব্যবস্থাপনা। মানে একখানে ফাঁকি দিয়ে অন্যখানের শূণ্যতা পূরণ হবার নয়। অথবা “অশিক্ষিত”, “শিক্ষিতের” বিভেদ দিয়েও এটার কোন সমাধান নেই। জান বাচাতে, লোভে, কামে ক্ষমতা চর্চায় শিক্ষিত বরং বেশি দুর্নীতি করার ক্ষমতা রাখেন।

৬. ঢাকা মাওয়া হাইওয়ে খুব সুন্দর তবে খেয়াল করেছেন কি সেখানে দিনে দুপুরে সুপার হাইওয়েতে উল্টোদিকে বাস চলে, মানুষ রাস্তা পারাপার হয়?

৭. বাংলাদেশের যাণবাহন মালিকানা ও ব্যস্থাপনাটি যে মাফিয়া তান্ত্রিক তা নিয়ে কোন সন্দেহ আছে?

৮. যাণবাহন ও চালকের মান নিশ্চিতকারী সংস্থাটি সবচেয়ে করাপ্ট?

৯. প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থার কোথায় কতবার ট্র্যাফিক রুল মেনে চলার শিক্ষা রয়েছে?

১০. প্রায়োগিক বাস্তব জীবনে সেটার কাঠামোগত প্রতিফলন কোথায়? শুধু ঢাকাতেই কয়টা ট্রাফিক লাইট কার্যকর?

১১. ভিআইপিরা কীভাবে রাস্তা আটকে, রাস্তার উল্টোদিকে, রাস্তা ভেঙ্গে চলাচল করে?

১২. একই রাস্তায় কত প্রকারের ও গতির যাণবাহন চলাচল করে?

১৩. প্রতি কিলোতে খরচ কত?

১৪. পথচারীর নিয়ম মানেন কতজন?

১৫. আপনার অভিজ্ঞতায় এখন পর্যন্ত কতবার ট্রাফিক নিয়ন্ত্রকের সাথে আঁতাত করেছেন? কতবার সফল হয়েছেন?

১৬. কতবার আপনার চালনা/ভিহিকিল সকলকিছু ঠিক থাকার পরও দুর্নীতির শিকার হয়েছেন?

১৭. কতবার নিজে মেনে চলেছেন?

১৮. আপনার যাতায়তের পথ ট্রাফিক ছাড়াও অন্যান্য ক্ষেত্রে কতটুকু নিরাপদ? যেমন ছিনতাই, রাহাজানি, গাড়ী পোড়ানো, রাস্তা জ্বালানো?

১৯. আপনার লাইসেন্স পরীক্ষার প্রস্তুতি কেমন ছিল? কতবার ঘুষ না দেবার কারণে আপনাকে ফেইল করানো হয়েছিল?

২০. কবে থেকে হেলমেট পড়া শুরু হয়?

২১. বেহুশ হয়ে ভিহিকিল চালিয়েছেন কতবার?

২২. কতবার রাস্তায় যথার্থ আলো ছিল?

২৩. ভুলভাবে ভিহিকিল চালনা করার ফলে নতুন করে কতবার ট্রেনিং নিতে হয়েছে?

২৪. কতবার আপনাকে হাত তুলে ইশারা করে থামতে বলা হয়েছে?

২৫. আপনার রাস্তার বাঁক কতখানি, উঁচুনীচু ঠিকঠাক মাপমত?

২৬. এক বছরে আপনার রাস্তা কতবার কাটা পড়ে?

২৭. এক বছরে আপনার রাস্তা কতবার পানিতে ডোবে?

২৮. আপনার কানের শ্রাব্যতার কি অবস্থা?

২৯. আপনার দৃষ্টির কি অবস্থা?

৩০. লাইসেন্স পাবার সময় কি আপনার সাইকোলজিক্যাল এসেসমেন্ট রয়েছে?

৩১. প্রতিবার কি আপনাকে এসেসমেন্টের পরীক্ষা দিতে হয়?

আমি তালিকা তৈরি করতে করতে কবরে চলে যাবো তবুও এটা শেষ হবে না।

তবে সত্য কথাটি হল এর সকলকিছু ঠিকঠাক না করলে কোনভাবেই এই হত্যা থেকে আপনি মুক্তি পাবেন না। এই তালিকা সমূহের একটিও বাদ পড়লে আপনার জন্য এই ট্রাফিক হত্যাকারী এবং আপনি সম্ভাব্য হত্যাকারী।

পদার্থবিজ্ঞানে আসি। ১৪৩ কেজির একটি বাইক ৮০ কেজির একজন চালক নিয়ে ৫৫ কিলোমিটার বেগে কাউকে ধাক্কা দিলে কি পরিমাণ ওজন নিয়ে ধাক্কা দেবেন?

একটি বাস বা ট্রাক ১০ কিমি বেগে একজন ৭০ কেজির মানুষের উপর শ্রেফ চেপে উঠবে তাতে ঐ মানুষটার কি অবস্থা হবে? খুলি কখন ফাটবে? পেট কখন পিষে যাবে?

এটি একটি নারকীয় শহর ও দেশ। মূল প্রসঙ্গে আসুন। একটি চলমান ভাড়ী বস্তু মানেই একটি চলমান অস্ত্র। এবং এটির চালনা, যে পথে চালনা এবং অন্যান্য মানুষ, প্রাণী ও বস্তু বিষয়ক পদার্থবিজ্ঞানই আপনাকে পরিষ্কার করে দেবে আসলে বিষয়টি কি।

আপনার ট্রাফিক অবকাঠামো ধুঁকে ধুঁকে চলছে

ট্রাফিক শিক্ষিত জনসংখ্যা তৈরিতে বিনিয়োগ শূণ্যের কাছাকাছি

আপনার জনসংখ্যা বিস্ফোরিত

আপনার দেহের মূল্য নাই

আপনার নিয়ন্ত্রক ব্যবস্থাপনা মোষ্ট করাপ্ট

আপনার নিয়ন্ত্রক ব্যবস্থাপনার উপর চাপ বিমানবিক

আপনার রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্ণীতি

আপনার দক্ষ শ্রমিকের সংখ্যা ক্রমহ্রাসমান

সিটিজেন একটি বাহাস ছাড়া আর কিছু নয়

আপনার পরিবহন মাফিয়াতান্ত্রিক

আপনার শহরের সাধারণ নাগরিকের মানসিক স্বাস্থ্য পরিস্থিতি রেড জোনে

আপনার শহরের সাধারণ নাগরিকের শারীরিক স্বাস্থ্য পিরিস্থিতি রেড জোনে

আপনার অর্থনীতি চোরাকারবারির অর্থনীতি/বেগম পাড়ার অর্থনীতি

আপনি পথে নামা সকল পথচারী ও চালক-কে চোর, অনিয়মকারী, ডাকাতে, পলাতকে রেডি করে রেখেছেন।

এটি একটি খুনি ব্যবস্থাপনা। ফলে আপনাদের প্রায়শই খুন হওয়া দেখতে হবে এবং খুন হবার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।

শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নিরাপদ করে বাঁচা যাবে না। শুধু সড়ক নিরাপদ করা যাবে না যতক্ষণ না সমাজ নিরাপদ হচ্ছে।

আপনারা যারা একটু অর্থশালী তারা কেন বেশি প্রোটেকশনের গাড়ী কেনেন? এসইউভি কেন কেনেন? কারণ সড়কের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চান। কেন ক্ষমতাবান হতে চান? যাতে এই জংলায় নিজের অংশটুকু যাতে নিরাপদ থাকে। কেন ক্যান্টমেন্টে সিধা হয়ে যান?

ফলে আবার ট্রাফিক ব্যবস্থা সঠিক করতে হলে আপনার রাষ্ট্রকে পাল্টাতে হবে। মূল প্রসঙ্গে আসেন, যেটা সামগ্রিক সমস্যা সেটাকে আতশবাজি আর জোড়াতালী দিয়ে সামলানো যাবে না। ক্ষমতাবনরা এটা ভালো বোঝেন, তাদের জন্য রাস্তা ফাঁকা থাকে, গাড়ীটাও শক্তিশালী হয়, চাপা দিলেও বিচার হয়না। ফলে শুভজিত যখন বলেন, “এইরকম মৃত্যুপুরী শহরের যে অবস্থা, তাতে একটু যদি রিসার্চ করা হয়, তাহলেই ধরা পড়বে, হাজার হাজার মানুষ, এই সাইকোপ্যাথের মতো মানুষের চেহারা নিয়ে, কোনো একদিন একটা বোমার মতো ফেটে যাওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে আপনার আমার আশেপাশে ঘুরছে।“ তখন ঠিকই বলেন। ফলে ক্ষমতাবানরাও এই সামগ্রিক পরিবর্তনের মূল কাজটার দিকে হাতই দেন না। সেটা সত্যিকারের দীর্ঘ মেয়াদী কাজ। বড় কঠিন সে কাজ। সেটা শুধু রাস্তা বানিয়ে ঠিক করার কাজ নয়।

আমি বলি কি এই দেশে জন্ম নিলেই আপনি নানান পর্যায়ে বোমা হয়ে ঘুরছেন, এরজন্য সাইকো হবারও দরকার নেই। ফলে এখন যেমন আছেন সেটাই থাকেন, জেগে উঠলে একটু কষ্ট বাড়বে এবং ঘুমিয়ে যে আছেন ঘুমিয়েই থাকেন আর আগারে বাগারে কথা বলে একটু মন শান্ত করে খেলা উপভোগ করেন। (আপডেটেড ৪ঠা ডিসেম্বর, ২০২২, সকালে ১১:৩০)

মঈন জালাল চৌধুরী সহকারী অধ্যাপক, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি। পি এই চ ডি ও পোস্ট ডক করেছেন জাপানের হিরোশিমা বিশ্ববিদ্যালয়ে।

https://www.facebook.com/rfaridi/posts/pfbid06CNSkobqEqPxAGU66E4gY6L2RAagUGMBWDGfEqYoL4wpypw8eswbpgtVWRte1TAYl
https://www.facebook.com/kajalabdullah/posts/pfbid032rX9Ld9YXFV7RRxA8sz3SAH8sh1EFYzsnjoSX5xothzJmC67isrmaCuzLv3cnsjMl
https://www.facebook.com/photo/?fbid=10229102725573683&set=a.1590572965135
https://www.facebook.com/musharrat/posts/pfbid0B7r2qp7oqWe33tj9WzZgonrjF8do7xA7ddWFYKRPWAj98cjKt3eeVN4wTgpkrj1Ml

Leave a Reply

Your email address will not be published.